দিন কয়েক টিভি কাগজ আর নেট এই ত্র্যহ্যস্পর্শের বাইরে ছিলাম। ফলে সুমনকাণ্ডে তোলপাড় বঙ্গসমাজের খবর কানে আসতে দু-দিন বিলম্ব হয়। তাহোক। তবে গায়ক রাজনীতিবিদ কবীরসুমনের পক্ষে বিপক্ষে নানান যুক্তিজালের বাইরে গিয়ে কয়েকটি কথা সাধারণ মানুষ হিসাবে ভাবার দরকার রয়েছে বইকি। রাজনীতির ক্ষেত্রটাই স্বাধীনতার পর থেকে দুর্বৃত্তদের শেষ আশ্রয় হয়ে উঠেছে দশকের পর দশক ধরে। তার প্রমাণ দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে। বর্তমান লোকসভায় ৪২% নির্বাচিত সাংসদের বিরুদ্ধে নানান অপরাধের অভিযোগে ফৌজদারী মামলা ঝুলে রয়েছে। বিভিন্ন আদালতে। মামলাগুলি ঝুলিয়ে না রাখলে। সঠিক বিচার করে নিষ্পত্তি করে ফেললে অকাল নির্বাচন করতে হতে পারে। শাসকদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির শক্তি হ্রাস পেতে পারে। জনগণের কাছে ভোট চাইতে লজ্জা লাগতে পারে। ফলে মামলাগুলি ঝুলিয়ে না রাখলে ভারতবর্ষের রাজনীতির চাকা সচল রাখাই মুশকিল। এই পরিস্থিতি কম বেশি প্রতিটি রাজ্যের বিধানসভাগুলিতেও বর্তমান। ফলে রাজনীতি দুর্বৃত্তদের শেষ আশ্রয় হয়ে উঠতে উঠতে বিগত সাড়ে সাত দশকে রাজনীতিই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে উঠেছে। এই দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিই নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে গোটা সমাজব্যবস্থাকে। ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি জাতিকে। সব জাতিই যে সমানভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তেমনটা নাও হতে পারে। কম বেশি পার্থক্য থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু মুশকিল হলো দুর্নীতির সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া। সে পাওয়া যাক আর নাই যাক। ভারতীয় রাজনীতির দিকে খোলা চোখে তাকালেই ভারতীয় জাতিসমূহ ও বিভিন্ন সমাজের ভিতরে দুর্নীতির ছবি স্পষ্টই দেখতে পাওয়া যায়। এই নিয়ে বিতর্ক থাকার কথাও নয়। বিশেষ করে আমাদের ব্যক্তিজীবনের অধিকাংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অভিজ্ঞতাও সেই কথারই প্রমাণ দেয়। ফলে আমরা কিন্তু খুব স্পষ্ট ভাবেই জানি। যে সমাজে আমাদের বাস। সেই সমাজের দুর্নীতির প্রকৃত চেহারাটি ঠিক কেমন। তাই আমাদের প্রতিদিনের বসবাসের ও চলাচলের সমাজে কি নিদারুণ ভাবে পচন ধরে গিয়েছে। সেই বিষয়ে আমাদের নিজেদের কাছে কোন সন্দেহ থাকার কথাই নয়। একটা সমাজে যখন পচন ধরে যায়। তখন সমাজের ভিতরে প্রায় কোন অংশই সেই পচনের শিকার হওয়া থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে না। পারার কথাও নয়। কারণ সমাজ একটা সজীব অস্তিত্ব। তার এক অংশে পচন ধরলে সেই পচন সমাজদেহের সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হতে বাধ্য। ফলত একটা পচন ধরা সমাজের যা চিত্র হওয়া উচিৎ। আমাদের আশেপাশের দৈনন্দিন চিত্রগুলি তার থেকে ব্যতিক্রমী হবে। এমন আশা করা প্রায় মুর্খের স্বর্গে বাস করারই নামান্তর।